ষাট গম্বুজ মসজিদ: স্থাপত্যশৈলীর এক বিস্ময়কর নিদর্শন


সৈয়দ ভাই:

বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের বাগেরহাট জেলায় অবস্থিত একটি অনন্য স্থাপত্য নিদর্শন হলো ষাট গম্বুজ মসজিদ। এটি শুধু বাংলাদেশের নয়, সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রাচীন মসজিদগুলোর একটি। এই মসজিদটি ইসলামী স্থাপত্যের এক অতুলনীয় নিদর্শন হিসেবে ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা রয়েছে।

১৫শ শতকে তৎকালীন বাংলার তুর্কি বংশোদ্ভূত শাসক খানজাহান আলী এই মসজিদটি নির্মাণ করেন। গৌড় অঞ্চলের মুসলিম সম্প্রসারণের সময় বাগেরহাটকে একটি ধর্মীয় ও বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলেন তিনি। এ মসজিদটিই ছিল তাঁর প্রতিষ্ঠিত নগরীর কেন্দ্রবিন্দু।

ষাট গম্বুজ মসজিদ মূলত ৮১টি গম্বুজ ও ৬০টি স্তম্ভ দ্বারা নির্মিত হলেও “ষাট গম্বুজ” নামেই এটি পরিচিতি পায়। সম্পূর্ণ পাথর ও ইটের সমন্বয়ে নির্মিত এই মসজিদের দেয়ালগুলো বেশ পুরু এবং স্থায়ীত্বশীল। প্রতিটি গম্বুজের নকশায় রয়েছে চমৎকার কারুকার্য যা এখনো চোখে লেগে থাকে।

মসজিদের ভেতরের সারিবদ্ধ খুঁটি এবং খিলানগুলো প্রাচীন মুসলিম স্থাপত্যশৈলীর নিদর্শন বহন করে। এর পূর্বদিকে রয়েছে তিনটি প্রধান প্রবেশপথ এবং প্রতিটি দেয়ালে রয়েছে শিল্পকর্মে ভরপুর জ্যামিতিক নকশা।

১৯৮৫ সালে ইউনেস্কো ষাট গম্বুজ মসজিদকে বিশ্ব ঐতিহ্য স্থাপনা হিসেবে ঘোষণা করে। প্রতিদিন দেশি-বিদেশি হাজার হাজার পর্যটক এই মসজিদ দেখতে আসেন।

এই মসজিদ কেবল একটি স্থাপত্য নিদর্শন নয়, বরং এটি মুসলমানদের কাছে একটি পবিত্র স্থানও বটে। প্রতি শুক্রবার এখানে জুমার নামাজে বহু মুসল্লি অংশগ্রহণ করেন।

ষাট গম্বুজ মসজিদ বাংলাদেশের ইতিহাস ও ইসলামী সংস্কৃতির এক জীবন্ত প্রতীক। প্রাচীনত্ব, স্থাপত্যশৈলী এবং ধর্মীয় গুরুত্বের কারণে এটি আজও আমাদের গর্বের জায়গা।

Post a Comment

0 Comments