সৈয়দ ভাই বিডি: টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলায় যমুনা নদীর পানি বাড়তে থাকায় আবারও জেগে উঠেছে নৌকা শিল্প। বর্ষার শুরুতেই চরাঞ্চলজুড়ে নৌকার কদর বেড়ে গেছে কয়েকগুণ। ফলে গোবিন্দাসী, গাবসারা, নিকরাইল ও অর্জুনা ইউনিয়নের কারিগররা দিন-রাত এক করে ব্যস্ত সময় পার করছেন নৌকা তৈরিতে।
নদী-নির্ভর এসব অঞ্চলে এখন নৌকাই একমাত্র ভরসা। চলাচল, মাছ ধরা, কৃষিপণ্য পরিবহন সবকিছুর জন্য প্রয়োজন নৌকা। সেই চাহিদা মেটাতে দম ফেলার ফুরসত নেই কারিগরদের।
সরেজমিনে দেখা যায়, কেউ কাঠ কাটছেন করাত দিয়ে, কেউ পেরেক ঠুকছেন হাতুড়ি হাতে। ১৪ হাতের একটি ডিঙ্গি নৌকা বানাতে খরচ পড়ে ৭,৫০০ থেকে ৮,০০০ টাকা। বিক্রি হয় ৯,০০০ থেকে ১০,০০০ টাকায়। ছোট নৌকার চাহিদাই বেশি বলে জানান কারিগর আজমত আলী।
গোবিন্দাসীর কারিগর মো. আজহার বলেন, “বছরের অন্য সময় ঘর-বাড়ি মেরামতের কাজ করি। কিন্তু বর্ষায় নৌকা বানানোই আয় রোজগারের বড় মাধ্যম। তিনজন মিস্ত্রি একদিনে একটি ছোট নৌকা বানায়। তবে কাঠ ও মজুরির দাম বেড়ে যাওয়ায় লাভ কমে গেছে।”
গোবিন্দাসী হাটে নৌকা কিনতে আসা ওসমান গনি জানান, “নিচু এলাকা প্লাবিত হলে নৌকাই আমাদের একমাত্র ভরসা। মাছ ধরা, পারাপার সব কিছুতেই এই নৌকাই দরকার হয়।”
সপ্তাহের রোববার ও বৃহস্পতিবার গোবিন্দাসীর হাটে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় নৌকা। প্রতিদিন গড়ে ৫ থেকে ৭টি করে নৌকা বিক্রি হচ্ছে বলে জানান স্থানীয় বিক্রেতারা।
স্থানিয় সাংবাদিক কোরবান আলী তালুকদার বলেন, “বর্ষায় চরাঞ্চালের অধিকাংশ এলাকা পানির নিচে চলে যায়। ফলে নৌকা ছাড়া চলাফেরা একেবারেই অসম্ভব। তাই এখানকার মানুষ বর্ষা এলেই নৌকা বানাতে বা কিনতে বাধ্য হন।” এই মৌসুমি শিল্প যেমন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করছে, তেমনি চরাঞ্চলের জীবনধারাতেও দিচ্ছে ভরসা। বর্ষা এলেই তাই আবার জেগে ওঠে যমুনার তীরের নৌকার পল্লীগুলো।
0 Comments